top of page

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ইতিহাস

  • Writer: Positive Bangladesh
    Positive Bangladesh
  • Jun 19, 2019
  • 3 min read

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জন্ম খুব বেশীদিন না হলেও বিজিবি ২১৬ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস ধারন করে আছে। দীর্ঘ এই চলার মাঝে তাঁরা প্রতিনিয়ত শিশু ও নারী পাচার রোধ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাসমূলক কাজ বা চোরাচালান প্রতিকার ও প্রতিরোধেও তাঁরা কাজ করে যাচ্ছে। এসবের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজও সমান তালে করে যাচ্ছে এই আধা-সামরিক বাহিনী।


ইতিহাস থেকে জানা যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৯৪ সালে 'ফ্রন্টিয়ার প্রটেকশন ফোর্স' গঠন করে। ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন নামটি পরিবর্তন করে 'রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন' রাখা হয়। প্রতিষ্ঠাকালে তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৪৪৮ জন, যার মধ্যে ২টি অনিয়মিত অশ্বারোহী দলের পাশাপাশি ৪টি কামানও ছিল। এভাবেই তাদের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮৬১ সালে দেশের পূর্ব দিকের অঞ্চলগুলোর পুলিশ বাহিনীর কিছু সংখ্যক সদস্য সমন্বয়ে বাহিনীটি পুনরায় গঠন করা হয়, যার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪৫৪ জন এবং নাম দেয়া হয় 'ফ্রন্টিয়ার গার্ডস'। এই বাহিনীতে নিয়মিত এবং অনিয়মিত উভয় ধরনের সদস্যই ছিল। ওই সময় তাদের সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামে।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম সীমান্তবর্তী এলাকায় ক্যাম্প সারেজমিনে দেখতে প্রায়ই যান এবং বিজিবি জওয়ানদের সাথে কথা বলেন ও তাদের সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেন। মহাপরিচালকের উপস্থিতিতে জওয়ানরা অনুপ্রাণিত হয়।



বিজিবি মহাপরিচালক
মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম

১৮৭৯ সালে 'ফ্রন্টিয়ার গার্ডস' পিলখানায় তাদের একটি ঘাঁটি স্থাপন। ঘাঁটিটির নাম ছিল 'স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানী'। ১৮৯১ সালে বাহিনীটির নাম আবার পরিবর্তন করে রাখা হয় 'বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ' এবং তাঁরা তাদের কার্যক্রম শুরু করে ৪টি কোম্পানির মাধ্যমে, যার নেতৃত্ব দেন একজন সুবেদার। ১৯২০ সালে লোকবল বৃদ্ধির মাধ্যমে তাঁরা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে। তখন ১৬ টি প্লাটুন সমন্বয়ে তাদেরকে 'ইস্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস' নামকরণ করা হয়। ১৯৪৭ সালে বৃহৎ ভারত ভাগের পর এই বাহিনীর নামকরণ করা হয় আবার - ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)। সেনাবাহিনী, সাধারণ মানুষ ও আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয় এই বাহিনীতে। ১৯৫৮ সালে ইপিআরকে চোরাচালান প্রতিকার করার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব প্রদান করা হয়।



১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় অবদান রাখে তৎকালীন ইপিআর যা এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা দেয়ার পর সেই ঘোষণাটি সাড়া দেশে পৌঁছানো জরুরী ছিল। তখন ঢাকায় ইপিআরের সদর দপ্তর পীলখানা থেকে এই ঘোষণা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। এরপর যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রথম দিকে বুড়িগঙ্গার নদীর তীরবর্তী জিঞ্জিরা নামক জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তুলে এবং পরবর্তীতে এই বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ১১টি সেক্টর থেকেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাহিনীটির অনেক সৈনিক প্রাণ হারান। সর্বমোট প্রায় ৮১৭ জন সেনা সদস্য শহীদের খেতাব পান। তাদের মধ্যে ২ জনকে তাদের অপরিসীম বীরত্বের জন্য 'বীর শ্রেষ্ঠ’ পদক দেয়া হয়, যা আমাদের দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সামরিক খেতাব। তাঁরা হলেন শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর।


স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ৩ মার্চ একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)। এই বাহিনীর কার্যক্রম ও কর্মকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৮০ সালের ০৩ মার্চ তাদের বিশেষ মর্যাদা ও স্বীকৃতি স্বরূপ জাতীয় পতাকা দেয়া হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে তাদের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। তাদের এই অবদানকে সম্মানিত করার জন্য তাদের ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৮’ প্রদান করা হয় ৷


২০১০ সালের ০৮ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে 'বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০' পাশ হয়। এবং ওই বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকেই তা কার্যকর করা হয়। ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারী 'বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’-এর সদর দপ্তরে তাদের নতুন পতাকা উত্তোলন করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে এই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। পতাকা উত্তোলনের সাথে সাথে নতুন মনোগ্রামও প্রকাশ করা হয় এবং এরই মাধ্যমে নতুন করে এই বাহিনীর পথ চলা শুরু হয়।



বর্তমানে সারা দেশে বিজিবির ১৬টি সেক্টর এবং ৬১ টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি রয়েছে অনেক বিওপি যাদের মাধ্যমে বিজিবি তাদের দায়িত্ব ও কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। সীমান্তের এই প্রহরীরা রাত জেগে, রোদে পুরে, জলে ভিজে দিন রাত কষ্ট করে যাচ্ছে লাল সবুজ পতাকার এই বাংলাদেশের সুরক্ষায়।


Comentários


© 2023 by The Artifact. Proudly created with Wix.com

bottom of page