ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ
- Positive Bangladesh
- Jun 19, 2019
- 2 min read
বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষায় বিজিবি জওয়ানরা সদা সতর্ক। তারা প্রস্তুত দেশের জন্য সর্বোচ্চ দিতে। তারা লালন করে বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফের দেশপ্রেম ও ত্যাগ।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের জন্য যে দুজন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ এর সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব “বীরশ্রেষ্ট্র” সম্মানে ভূষিত হন তাদের একজন ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ। তিনি ১৯৪৩ সালের ১লা মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজলোর সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মুন্সি মেহেদি হাসান ছিলেন মসজিদের ইমাম এবং মাতা মুকিদুন্নেসা। তাঁর ডাকনাম ছিলো রব। ১৯৬৩ সালের আব্দুর রউফ যোগ দেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে যা বর্তমানে বিজিবি নামে পরিচিত। তবে চাকরী পাবার জন্য তাঁকে ৩ বছর বেশি বয়স দেখাতে হয়েছিলো ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে তার পোস্টিং ছিল ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস্ হয়ে চট্টগ্রামে ১১ উইং-এ । মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তার অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কোম্পানির হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি-মহালছড়ি জলপথে পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনীর চলাচল প্রতিরোধের দায়িত্ব পান। কোম্পানিটি বুড়িঘাট এলাকার চিংড়িখালের দুই পাড়ে অবস্থান নিয়ে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি স্থাপন করে।
স্বাধীনতার পর এ বাহিনীর নামকরণ করা হয় বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)। পরবর্তিতে জাতীয় সংসদে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০’আইন প্রণয়ন করা হয়। এর পর থেকে এই বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ নামে পরিচিত।

১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মর্টার, মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্রসস্ত্র সাতটি স্পিডবোট এবং দুইটি লঞ্চ নিয়ে বুড়িঘাট এলাকার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কাছাকাছি পৌঁছেই পাকিস্তানি বাহিনী স্পিডবোট থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে তীব্র আক্রমণ শুরু করে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যোদ্ধারাও তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং পরিখায় অবস্থান নেয়। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মেশিনগান ও মর্টার শেলে তীব্র আক্রমণের একপর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারে প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরে। ঘাঁটির কমান্ডার আব্দুর রউফ বুঝতে পারলেন যে এভাবে চলতে থাকলে সবাইকে মৃত্যু বরণ করতে হবে। তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নিলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সৈন্যরা পিছু হটতে লাগল। তবে তিনি এটাও চিন্তা করলেন যে সবাই একযোগে পিছু হটলে বিপদ আরও বাড়বে এমকি সবাই মারা যেতে পারে। আব্দুর রউফ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি পিছু হটবেন না।
বরং পরিখায় অবস্থান করে হানাদার বাহীনির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন যাতে করে তার সহযোদ্ধারা নিরাপদে পিছু হটতে পারে। তিনি নিজ পরিখায় দাঁড়িয়ে হানাদার বাহীনির স্পিডবোটগুলোর দিকে অনবরত গুলি করতে লাগলেন। একা এই কৌশলে তিনি জীবন বাজি রেখে লড়ে যাচ্ছিলেন। সাতটি স্পিডবোট একে একে ডুবিয়ে দেন। হানাদার বাহিনী তাদের বাকি দুটি লঞ্চ নিয়ে বাধ্য হয় পিছু হটতে। তবে পিছু হটে লঞ্চ থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করে। রউফের একার পক্ষে মর্টারের শেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছিল অসম্ভব। হঠাৎ একটি মর্টারের শেল তার বাঙ্কারে এসে আঘাত করে এবং তিনি শহীদ হন। ইতিমধ্যে তার সহযোদ্ধারা নিরাপদ দূরুত্বে সরে যেতে পেরেছিলো। জীবন দিয়ে তার নিজের কোম্পানির প্রায় ১৫০ জন সহযোদ্ধার জীবন রক্ষা করে যান।
তার সহযোদ্ধারা পরে তার লাশ উদ্ধার করে নানিয়ারচরের চিংড়ি খালের পাশে একটি টিলার উপর সমাহিত করে। তার অসীম সাহস ও আত্মত্যাগের জন্য বাংলাদেশ রাইফেলস এই বীরকে ১৯৭৩ সালে অনরারি ল্যান্স নায়েক পদে মরনোত্তর পদোন্নতি প্রদান করে। সরকার তার সম্মানে তার জন্মস্থান সালামতপুর গ্রামের নাম রউফ নগর হিসেবে পরিবর্তিত করে।
Comments